ফিলিস্তিন সংকট এবং ইসরাইলী আগ্রাসন


ফিলিস্তিন সংকট এবং ইসরাইলী আগ্রাসন
ফিলিস্তিনের ইতিহাস :
ফিলিস্তিন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উটলে ফিলিস্তিন এক অন্ধকার অরণ্যে পা বাড়ায় যা থেকে তারা আজও বেরিয়ে আসতে পারেনি ফিলিস্তিন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে শুরুতে ইংরেজদের বিপক্ষে ছিল তাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ফিলিস্তিনকে ব্রিটেনের পক্ষ নিতে অনুরোধ জানান ব্রিটেন ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার আশ্বাস দিলে ফিলিস্তিন ব্রিটেনের সাহায্যে এগিয়ে আসে

বেলফোর ঘোষণা : ১৯১৭

ফিলিস্তিন সমস্যার বীজ বপন করা হয় ১৯১৭ সালে বেলফোর ঘোষনার মধ্য দিয়েবেলফোর ঘোষণা হলো ইউরোপের জায়োনিস্ট লবির নেতা ওয়াল্টার রথশিল্ডকে কে লেখা ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী বেলফোরের চিঠি ওই চিঠিতে ফিলিস্তিনে ইহুদীদের জন্য আলাদা আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ছিলো এটি ইতিহাসে বেলফোর ঘোষণা নামে প্রসিদ্ধ শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এই ঘোষণা দুটি ভিন্ন ভিন্ন মহলের কাছে একই সাথে নন্দিত এবং নিন্দিত হয়ে আসছে২০১৭ সালে বেলফোর ঘোষনার ১০০ বছর পূর্ণ হয়।

হেইস বাইজম্যান ফ্যাক্ট
তিনি একজন ইহুদী বিজ্ঞানী প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ব্রিটিশদের গোপন বোমা বানানোর কৌশল শিখিয়ে দিয়েছিলেন আর এতেই প্রসন্ন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তাকে পুরষ্কৃত করতে চাইলেন কিন্তু বাইজম্যান এমন বর চাইলেন যা পুরো একটা জাতির দুর্ভাগ্য ডেকে আনলো হেইস বাইজম্যান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাইলেন স্বজাতির জন্য পৃথক একটি রাষ্ট্রআর এটাও শর্ত দিলেন এই রাষ্ট্র যেন হয় ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তাকে আশ্বাস দিলেনদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্যের পতন হলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ফিলিস্তিনকে তাদের অংশ বানিয়ে নেয়
১৯৪৭ সালের ভোট

বছর ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ফিলিস্তিন (আরব দেশ)এবং ইসরায়েল (ইহুদী রাষ্ট্র) নামে দুটি স্বাধীন দেশের জন্ম দেয় তারা এরপর ফিলিস্তিন ত্যাগ করে কিন্তু তারা ইসরায়েলকে সুবিধা প্রদান করতে ব্যাপক আগ্রহ প্রদর্শন করে ব্রিটিশ এবং আমেরিকানদের পীড়াপীড়িতে জাতিসংঘ ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে ভোটাভুটির আয়োজন করে এতে ৩৩ টি দেশ ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে ভোট দেয়,১৩ টি দেশ বিপক্ষে ভোট দেয় এবং ১০টি দেশ নিরপেক্ষ থাকে ২৯ নভেম্বরকে জাতিসংঘ ফিলিস্তিন দিবস হিসেবেও পালন করে থাকেঅন্যায় ভাবে ইসরায়েলকে দেওয়া হয় ৫৭% জমি আর ফিলিস্তিনকে দেওয়া হয় ৪৩% জমি যদিও ইসরায়েলের জনসংখ্যা তখন মোট জনসংখ্যার মাত্র এক-চতুর্থাংশ ছিলকিন্তু আরব বিশ্ব জাতিসংঘ তথা ইংরেজ -মার্কিন জোটের এই দৃষ্টতা মেনে নিতে পারেনিএরপরেই শুরু হয় ভয়াবহ যুদ্ধ




আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ:

চার-চারটি যুদ্ধ সমগ্র আরব বিশ্বকে মাতিয়ে রেখেছে সবসময়এই চারটি যুদ্ধ একসাথে আলোচনা সময়সাপেক্ষ ব্যাপারতবুও সামান্য ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করছি

প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ:১৯৪৮

১৯৪৮ সালে আরবজোটের অনেকগুলো দেশ একত্র হয়ে ইসরাইলী সেনা তথা ইংরাজ -আমেরিকান বাহিনীর মোকাবেলা করে তবে এই যুদ্ধের সূচনা করেছিল ইসরায়েল এই যুদ্ধের মন্ত্রণা দিয়েছিল ইংরেজি তথা আমেরিকান নেতারা যুদ্ধের ফলাফল আরব বিশ্বের জন্য মোটেও সুখকর ছিল না তাদের সম্মিলিত আক্রমণ ইসরাইলী বাহীনির কাছে পদানত হয়ইসরায়েল আরব দেশগুলো থেকে আরো জমি দখল করে শক্তিশালী হয়ে ওঠেতবে জর্ডান কর্তৃক পশ্চিম তীর এবং মিসর কর্তৃক গাজা উপত্যকা দখলকৃত হয়

দ্বিতীয় আরব ইসরায়েল যুদ্ধ:১৯৫৬

এবার সংঘর্ষ হয় মিশরের সাথে ইসরায়েলের ইসরায়েল মিশরের সুয়েজ খালে আগ্রাসন চালায় রাশিয়া এই যুদ্ধে মিশরকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে ইসরায়েল সুয়েজ খালের যাতায়াত ব্যাবস্থা গুড়িয়ে দেয় এই যুদ্ধ  শান্তিচুক্তির মধ্য দিয়ে মিমাংশিত হয় মিশর যুদ্ধে অনেক সৈন্য আর অস্ত্র হারায়

তৃতীয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ ১৯৬৭:

ছয় দিনের এই যুদ্ধ হয় ১৯৬৭ সালে এই যুদ্ধে লাভের পাল্লা ভারী হয় ইসরায়েলের যুদ্ধ সবচেয়ে ক্ষতি করেছে আরব বিশ্বের যে কয়টি দেশ ইসরায়েলের বিপক্ষে গিয়েছে তাদেরই চরম মুল্য দিতে হয়েছে যুদ্ধে ইসরায়েল যা যা লাভ করে-
1.       সিরিয়া থেকে-(গোলান মালভূমি)
2.       জর্ডান থেকে-(পশ্চিম তীর)
3.       মিশর থেকে-সিনাই উপদ্বীপ
চতুর্থ আরব ইসরায়েল যুদ্ধ:১৯৭৩

যুদ্ধের একটি নব্য সংযোজন হচ্ছে তেল অস্ত্রের ব্যাবহার যুদ্ধে আরব বিশ্ব পশ্চিমা দেশগুলোর উপর তেল অবরোধ আরোপ করে এতে করে পশ্চিমা দেশগুলোর অস্ত্রবাণিজ্যে আঘাত লাগে ১৯৭৩ সালে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আরবের রাজনীতি কিছুটা শান্ত ছিল কয়েক বছর আমেরিকা এগিয়ে আসে শান্তির বার্তা নিয়ে যদিও মুখে মধু অন্তরে বিষ এটাই ছিল তৎকালীন সময়ে আমেরিকান ফিলিস্তিন নীতি

গুরুত্বপূর্ণ ফিলিস্তিনি সংঘটন :

ফিলিস্তিনের উল্লেখযোগ্য সংগঠনগুলো হলো-

পি.এল.(PLO):
পি.এল. অথবা Palestine liberation organization একটি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন এটি ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় রামাল্লায়(পশ্চিম তীর) এর সদর দপ্তর অবস্থিত ইয়াসির আরাফত এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসির আরাফত ১৯৮৮ সালে জেরুজালেম নগরীকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গড়ে তুলার আহবান জানান কিন্তু সে সময় তিনি যেসব জায়গা নিয়ে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র করার চেষ্টা করেন সেখানে ইসরায়েলী শাসন চলছিল ইয়াসির আরাফত ফিলিস্তিন সমস্যাকে স্থায়ীরুপে সমাধান করার চেষ্টা করেছিলেন ১৯৮৯ সালে তিনি সর্বপ্রথম PLO এর প্রেসিডেন্ট হন
ফাতাহ
ইয়াসির আরাফতের নেতৃত্বে সংগঠনটি ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এটি ফিলিস্তিনের নেতৃত্বস্থানীয় রাজনৈতিক সংঘটন মাহমুদ আব্বাস দলটির প্রথম প্রজন্মের একজন নেতা এবং বর্তমানে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেনফাতাহ নিজ অস্তিত্বের কথা ঘোষণা করে ১৯৬৫ সনে মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জামাল আবদুন নাসেরের অনুরোধে ওই ঘোষণা দেয় ফাতাহ নাসের ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত মিশর শাসন করেন একমাত্র ফিলিস্তিনিদের ঐক্যবদ্ধ সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমেই অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ড মুক্ত করা সম্ভব হবে বলে নাসের বিশ্বাস করতেন তাই নাসেরের নেতৃত্বাধীন মিশর ফাতাহকে অস্ত্র সামরিক উপকরণের যোগান দেয় রাজনৈতিক সংগ্রামের পাশাপাশি ফাতাহ জনপ্রিয় গণপ্রতিরোধ আন্দোলনও গড়ে তোলে এবং ফাতাহ' সামরিক শাখার নাম দেয়া হয়েছিল "আস সায়িক্বা" বা "বজ্র" ফাতাহ' বেশিরভাগ রাজনৈতিক সামরিক সদস্যরা থাকতেন মিশর, সিরিয়া, লেবানন, জর্দান, আলজেরিয়া তিউনিশিয়ায়
হামাস:
১৯৮৭ সালে গাজা উপত্যকায় সংগঠনের জন্ম দেন শেখ আহমেদ ইয়াসির এবং মাহমুদ জাহারএই সংঘটন ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে অধিকাংশ ভোট লাভ করে জিতে যায় ২০০৭ সাল থেকে এই সংঘটন গাজায় ফিলিস্তিনি ভূ-খন্ড শাসন করছে ২০০৪ সালে ইয়াসির আরাফতের মৃত্যুর পরে এই সংঘটনটির সাথে ফাতাহের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায় কারনে হামাস এবং ফাতাহ দুটি সংঘটন পরষ্পরবিরোধী মতাদর্শে চলেতবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এসব দেশ হামাসকে একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে মনে করে থাকে

ওসলো শান্তি চুক্তি:১৯৯৩

১৯৯৩ সালে আমেরিকাতে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যেখানে পি.এল. এবং ইসরায়েল পরস্পরকে স্বীকৃতি প্রদান করে ইয়াসির আরাফতের এই সিদ্ধান্তকে অনেক আরবই মন থেকে মেনে নিতে পারেনি কিন্তু চিরস্থায়ী শান্তি স্থাপনের জন্য ইয়াসির আরাফতের এই উদ্যোগ পশ্চিমা বিশ্ব দারুণ ভাবে স্বাগত জানায় আরাফত ২০০৪ সালে রহস্যজনক ভাবে নিহত হনধারনা করা হয় তাকে ইসরাইলীরা রাসায়নিক হামলা করে হত্যা করেছে

জাতিসংঘের পদক্ষেপ
ফিলিস্তিন ইস্যুতে জাতিসংঘ এক প্রকার স্বাক্ষী গোপাল হয়ে বসে আছে আমেরিকা আর ব্রিটেন জাতিসংঘকে কেবল একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যাবহার করেছে১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ তার ২৪২ নং এবং ৩৩৮ নং প্রস্তাবনা অনুযায়ী ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়২০১২ সালে জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয় সেই মর্যাদা অনুযায়ী ফিলিস্তিন জাতিসংঘে কেবল বক্তৃতা দিতে পারবে, কোন ভোটদান করতে পারবে না
জেরুজালেমের ইতিহাস

জেরুজালেম একটি পবিত্র নগরী পাশাপাশি জেরুজালেম একটি তীর্থক্ষেত্র তিন ধর্মের কাছে জেরুজালেম একটি পবিত্র স্থান এখানে যিশু খ্রিষ্টের স্মৃতি বিজড়িত রয়েছে তাই খ্রিষ্টানদের কাছে এটি পবিত্র জায়গা একই সাথে মুসলমানদের জন্য জায়গাটি পবিত্র এখানে মুসলমানদের জন্য পবিত্র আল-আকসা মসজিদ রয়েছেইহুদী ধর্মাবলম্বী দের জন্যেও এটি পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে
আল আকসা মসজিদ :

অষ্টম শতাব্দীতে নির্মিত আল-আকসা মসজিদ জেরুজালেমে অবস্থিত এই মসজিদ নির্মাণ কার্যে পদক্ষেপ নেন খলিফা হযরত ওমর তবে একাদশ শতাব্দীতে ভূমিকম্প হলে মসজিদটি পুন:নির্মান করা হয় যা এখনো আছে এটি মুসলমানদের জন্য তৃতীয় পবিত্র স্থান বলে বিবেচিত হয়মসজিদটিতে ১৯৬৯ সালে অগ্নিসংযোগ করা হলে মুসলিম বিশ্ব তাদের নিরাপত্তা নিয়ে সন্দিহান হয়ে যায় তারা এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি সংস্থার জন্ম দেয় যা . আই.সি নামে পরিচিত

যিশু খ্রিস্টের জন্মস্থান

জেরুজালেমের বেথেলহামে যিশু খ্রিস্টের জন্ম হয়েছে তাই খ্রিষ্টানদের কাছে এই জায়গা পবিত্র বলে বিবেচিত হয় তাই এশিয়ান মুসলিম শক্তির সাথে ইউরোপিয়ান খ্রিস্টানদের বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়
ক্রুসেডের যুদ্ধ

জেরুজালেম নগরীকে দখল করতে মুসলমান এবং খ্রিস্টানদের মাঝে দীর্ঘমেয়াদি এক যুদ্ধ হয় যা ক্রুসেডের যুদ্ধ নামে পরিচিত এই যুদ্ধ শুরু হয় ১০৯৫ সালে এবং শেষ হয় ১২৯১ সালে প্রায় দুইশত বছর চলতে থাকা যুদ্ধের মধ্যে নয়টি বড় সংঘর্ষ হয় যুদ্ধের নাম ক্রুসেডের যুদ্ধ রাখার কারন হচ্ছে এই যুদ্ধে খ্রিস্টান সেনারা পোপের কথামতো বুকে ক্রুশ চিহ্ণ লাগিয়ে যুদ্ধ করে ক্রুসেড কথার অর্থ হচ্ছে ধর্মযুদ্ধ জেরুজালেম দখল করার জন্য যুগে যুগে আরো অনেক যুদ্ধ হয়েছে

সাম্প্রতিক সময়ে জেরুজালেম :

জেরুজালেম দখল নিয়ে বর্তমান সময়ে বেশ ভালোই টানাহ্যাঁচড়া চলছে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ব্যপারে ইন্ধনদাতা হিসেবে কাজ করছে ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালে ইসরায়েল সফর করার পর থেকেই গুঞ্জন শুরু হয়মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২০১৭ সালের ডিসেম্বর ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমের নাম বলেছেন অথচ সেই জেরুজালেম জাতিসংঘ ঘোষিত একটি আন্তর্জাতিক এলাকা এই সিদ্ধান্ত দিয়ে ট্রাম্প জাতিসংঘের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করার পাশাপাশি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী নীতির পরিচয় খোলাসা করেছেন ট্রাম্প ২০১৯ সালের মধ্যে ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব থেকে জেরুজালেম স্থানান্তরের আদেশ দিয়েছেন এটা দাবানলে ঘি ঢালার মতই সমগ্র ফিলিস্তিনকে উসকে দিচ্ছে পি.এল. ইসরায়েলকে প্রদান করা স্বীকৃতি প্রত্যাহার করবে জানিয়েছে আগামী সময়ে ফিলিস্তিন উত্তপ্ত থাকবে, উত্তপ্ত থাকবে বৈশ্বিক রাজনীতি

বিশ্বজুড়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের এই ঘোষণা বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বইয়ে দিয়েছে মুসলিম বিশ্বের নেতারা ট্রাম্পের ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন
1.       মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পের ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন
2.       তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তায়েপ এরদোগান এই ঘটনার করা সমালোচনা করেছেন এবং ব্যাপারে তুরস্কের অবস্থান পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন তিনি ট্রাম্পের সমালোচনা করার পাশাপাশি জেরুজালেম ইস্যুতে ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ করেছেন
3.       ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মক্রোর সাথে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে সাক্ষাত করেছেন তাই অনুমান করা যাচ্ছে জেরুজালেম ইস্যুতে প্যারিসকে পাশে পাচ্ছে না ওয়াশিংটন
4.        বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী প্যালেস্টিনিয়ান জনগনের জেরুজালেমের উপর অধিকার রয়েছে বলে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের বন্ধু রাষ্ট্র তাই জেরুজালেম ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান স্বচ্ছ 
ছাড়া অনেক নেতৃবৃন্দ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং সংবাদ মিডিয়ায় ট্রাম্পের এই হটকারী সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন

জেরুজালেম নিয়ে জাতিসংঘের বক্তব্য

জাতিসংঘের নবম মহাসচিব এন্তনি গুতেরেস ট্রাম্পকে ধুয়ে দিয়েছেন জেরুজালেম জাতিসংঘ ঘোষিত একটি আন্তর্জাতিক এলাকা এই এলাকায় মার্কিন আগ্রাসন জাতিসংঘ সহজভাবে নেয়নিএন্তনি গুতেরেস মার্কিনী নৈরাজ্যবাদী মানসিকতার নিন্দা করেছেন জাতিসংঘ জেরুজালেম ইস্যুতে ডিসেম্বর ২০১৭ সালে এক জরুরি বৈঠক করেতবে  দীর্ঘস্থায়ী শান্তি স্থাপনে জাতিসংঘ অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারেনি

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে ইইউর তহবিল
পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের উপস্থিতি সুসংহত করা এবং একটি গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহি মুলক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে ইউরোপিয় ইউনিয়ন(ইইউ) কাজ করে যাচ্ছে।ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সহায়তা করার জন্য ব্রাসেলসে ইইউ নেতাদের বৈঠকে ১৯৪৯ সালে UNRWA গঠন করা হয়।যদিও যুক্তরাষ্ট্র UNRWA এর এক তৃতীয়াংশ ব্যায় ভার নির্বাহ করতো তবে ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়রী ডোনাল্ড ট্রাম্প UNRWA তে সাহায্য বন্ধের ঘোষনা দেয়। তবে নতুন রাষ্ট্র গঠনের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ফিলিস্তিনকে ৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার দিবে।

ভারতের অবস্থান:
সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন সফর করেছেন ইসরায়েলের সাথে ভারতের প্রযুক্তিগত এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বড় শক্তিগুলোর সহায়তা লাভ করেছে ভারত ইসরাইলের সাথে ঐতিহ্যগতভাবে ভালো সম্পর্ক রেখে চলে কখনো প্রকাশ্যে, কখনো গোপনে ভারত ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ধরে রেখেছে তাই জেরুজালেম ইস্যুতে ভারত ইসরায়েলের পক্ষে থাকবে আশা করা যায় ভারত ফিলিস্তিন সফর করে ফিলিস্তিনকেও স্বাধীনতার আশ্বাস দিয়েছেআপাতদৃষ্টিতে কেউ ভাবতে পারেন ভারত ফিলিস্তিনকে সাহায্য করবে কিন্তু ইসরায়েলের সাথে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বাণিজ্য রয়েছে ভারতের ইসরায়েল ভারতের অস্ত্রের প্রধান যোগানদাতা এসব সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে জেরুজালেম ইস্যুতে ভারত ইসরায়েলের বিপক্ষে কখনোই যাবে না তবে জেরুজালেম ইস্যুতে ভারত কূটবুদ্ধিতে নৈপুন্য দেখিয়েছে

ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাংলাদেশ :
বাংলাদেশ তার সংবিধানের বিধি মোতাবেক নির্যাতিত মানুষের পাশে থাকবে এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে রয়েছে শুধু তাই নয় ফিলিস্তিনের উপর আক্রমণকারী ইসরায়েলের সাথে বাংলাদেশ কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখেনাবাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়ে সব দেশে এন্ট্রি করা গেলেও ইসরায়েলে এন্ট্রি করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে
ফিলিস্তিন ও জাতিসংঘ
ফিলিস্তিনের বর্তমান নাম ‍State of Palestine. একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিন ২৯ নভেম্বর ২০১২ সালে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়।যদিও ফিলিস্তিন ২০১১ সালে জাতিসংঘের সদস্য পদের জন্য আবেদন করে তবে তাদের জাতিসংঘের সদস্যপদ দেওয়া হয় না।জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের বর্তমান মর্যাদা অসদস্য পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র।

আগামী সময়:

ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্তানান্তর করতে হলে আমেরিকাকে এবং ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়তে হবে এটা আরব বিশ্বকে উত্তপ্ত করে তুলবে ফিলিস্তিনের সাধারণ জনগণ ঘটনা কখনো মেনে নিবে না তাই তারা সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হবে যদি জেরুজালেমে রাজধানী স্থানান্তর হয়েও যায় ইসরায়েল জেরুজালেমে শান্তিতে থাকবে না কারণ অধিকার আদায়ে ফিলিস্তিন এই ধৃষ্টতার জবাব দিতে চাইবে সাথে মুসলিম বিশ্বের নেতারা বিষয়টাকে গুরুত্বের সাথে দেখবেন
শেষকথা
ফিলিস্তিন সংকট ও বর্তমান বিশ্বের অবস্থান শীর্ষক উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আলোচনার শেষপ্রান্তে এসে আমারা এ কথা বলতে পারি যে,পৃথিবী জুড়ে মুসলমানরা নানাভাবে নির্য়াতিত হচ্ছে ইয়াহুদী খ্রিষ্টানরা নিজেদের প্রয়োজনে মুসলমানদের ব্যবহার করে আইএস বা আল কায়েদার মতো জঙ্গি গোষ্ঠী গড়ে তুলছে আবার তাদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করার নাম করে বিশ্বজুড়ে মুসলমান নিধন করছে।পাশাপাশি ক্ষমতাসীনেরা ইয়াহুদী খ্রিষ্টানদের সামগ্রীক উন্নয়নের জন্য মুসলমানদের প্রতি আগ্রাসন চালাচ্ছে।ইসরাঈল কর্তৃক ফিলিস্তিন দখল ও তাদের উপর হামলা তারই অন্তর্ভূক্ত।এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে ট্রাম্পেরমত শাষক কে পরিহার করতে হবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Write a letter to your friends inviting him to your sister’s marriage ceremony

বাংলা বানানে ‘ই-কার‘ এবং ‘ঈ-কার’ এর নিয়ম

বাংলায় মধ্য-অ এর উচ্চারণ