রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশ
রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশ
রোহিঙ্গা পরিচিতি
রোহিঙ্গা একটি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী যারা নিজ দেশেও পরবাসী। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়। আরাকানী মুসলিমরা সেখানে হাজার বছর ধরে বসবাস করলেও বাংলাভাষী ও মুসলিম হওয়ার কারনে তারা মিয়ানমারের সরকার ও নাগরিকদের কাছে বিদেশী,বাঙ্গালি বা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে পরিচিত। জাতি সংঘ রোহিঙ্গাদের "বিশ্বের সবচেয়ে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী " হিসেবে অভিহিত করেছেন।
কারও কারও মতে রোসাঙ্গ থেকে রোহিঙ্গা শব্দটির উদ্ভব।নবম-দশম শতকে আরাকান রাজ্য রোহান কিংবা রোহাঙ নামে পরিচিত ছিল।রোহিঙ্গা শব্দটি রোসাঙ্গ শব্দটি থেকে এসেছে। সেই অঞ্চলের অধিবাসী হিসেবেই রোহিঙ্গা শব্দের উদ্ভব।
কারও কারও মতে, রোহিঙ্গা শব্দটি রেঙ্গুন শব্দের পরিবর্তিত রুপ।সেই মতে রেঙ্গুনে বসবাসকারী বার্মিজ সম্প্রদায় রোহিঙ্গা নামে পরিচিত।
কারও কারও মতে আফগানিস্তানের রোহিঙ্গা জেলা থেকে আগত হওয়ার কারনে এই নামকরন।তাদের মতে, ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বীন বখতিয়ার খলজীসহ বাংলার মুসলমান বিজেতা ও শাসকগোষ্ঠী ইসলাম প্রচার ও প্রসারের জন্য আফগানিস্তানের রোহিঙ্গা জেলা থেকে কিছু লোককে ধর্ম প্রচারের জন্য আরাকানে পাঠিয়েছিলেন। সেই মতে তাদের নামানুসারে নাম হয় রোহিঙ্গা।
রোহিঙ্গাদের ইতিহাস
১৩ তম শতকে বাংলার সম্রাট নাসিরুদ্দিন শাহ রোহিঙ্গাদের উন্নয়নে পদক্ষেপ নেন এবং আরাকানে একটি মুসলিম রাজ্য গঠনের উদ্যোগ গ্রহন করেন।উনিশ শতক পর্যন্ত মিয়ানমার ভারতবর্ষীয় সাম্রাজ্যের অন্তভুক্ত ছিল।তখন ভারত উপমহাদেশের প্রধান ধর্ম ছিল হিন্দু। সময়ের পরিবর্তনে এখানে মুসলিম শাসন আসে।যার প্রভাব পুরো ভারতব্যাপী পড়ে।মুসলিমদের শাসনামলে অন্য ধর্মের লোক দলে দলে মুসলিম ধর্ম গ্রহন করে।আবার গৌতম বুদ্ধের বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারের ফলে এই ধর্মের অনুসারী সংখ্যাও উপমহাদেশে বাড়তে থাকে। অন্যদিকে ব্রিটিশ ছত্রছায়ায় মিশনারীদের প্রভাবে এই এলাকায় খ্রিস্টান ধর্মাবলাম্বিদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। কাল পরিক্রমায় ভারতবর্ষীয় হিন্দুরা ক্ষমতায় এলে বৌদ্ধ নিধন শুরু করে।নিরুপায় বৌদ্ধরা আরাকান রাজ্যে আশ্রয় গ্রহণ করে। বৌদ্ধরা আরাকানে মগ বা রাখাইন নামে আর মুসলিমরা রোহিঙ্গা নামে পরিচিত।
মধ্যযুগে বাংলায় মোগল-পাঠানদের সংঘর্ষ এর ফলে বাংলার অভিজাত মুসলমান সম্প্রদায় আরাকানে আশ্রয় নেয়য়। ১৬ শতকে আরাকানে রাজসভায় বাংলা সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের বেশ প্রভাব ছিল। মহাকবি আলাওল, দৌলত কাজী তাদের অন্যতম।বলাবাহুল্য যে অভিজাত মুসলিম সম্প্রদায় এবং তাদের চাকর-চাকরানীরাও সেখানেই বসবাস করেছেন।জেনে রাখা দরকার চট্রগ্রাম ও কক্সবাজারের লাগোয়া সীমান্তবর্তী অপর পাশের এলাকাই হচ্ছে আরাকান।প্রাচীনকাল থেকেই এই অঞ্চলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত বণিকেরা ব্যবসা-বানিজ্য করেছেন।ব্যবসায় মুনাফা ভাল হওয়ায় অনেকেই বিয়ে-সাদী করে স্থায়ী হয়েছেন।
মুঘল সম্রাট শাহজাহানের ছিল চার সন্তান। তাদের নাম ছিল ১.দারা ২.সুজা ৩.আওরঙ্গজেব ৪.মুরাদ।
সম্রাট শাহজাহানের এই চার সন্তানের মাঝে সিংহাসন নিয়ে দ্বন্ধে যুবরাজ আওরঙ্গজেব এবং যুবরাজ সুজার মাঝে যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে এই দুই ভাইয়ের অন্যান্য ভাই- বোনেরা দুই জনের পক্ষেই অবস্থান নেন। যুদ্ধে আওরঙ্গজেব জয়ী হলে প্রথাগতভাবেই সুজা নির্বাসিত জীবন বেছে নিয়ে আরাকানের উদ্দেশ্য রওয়ানা হন তার অনুসারীদের নিয়ে। সাথে ছিল একমাত্র কন্যা আমিনা।কথিত সোনা-রুপা বোঝাই ১৮ টি নৌকা ও অন্যান্য রশদ নিয়ে চট্রগ্রাম থেকে তিনি আরাকানে নির্বাসনে যান।পথিমধ্যে সামুদ্রিক ডাকতাদের কবলে পরার পর ৭ নৌকা বোজাই সোনা-রুপা তিনি নিতে পেরেছিলেন। সেখানে গেলে আরাকানের স্থানীয় রাজা তাদেরকে পাহাড়ের তীর ঘেষা এক সুরম্য অট্রালিকা দেন বসবাস করার। কথিত যে, শাহ সুজার কন্যা ছিল অনিন্দ সুন্দরের অধিকারী। স্থানীয় রাজা প্রিন্সেস আমিনাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলে শাহ সুজা সেই প্রস্তাব ঘৃনাভরে ফিরিয়ে দেন।এতে স্থানীয় রাজা অপমানিত হন। ঘুমন্ত অবস্থায় ভোর রাতে শাহসুজার অট্রালিকায় আগুন দেয়া হয় চারদিক থেকে দরজা বন্ধ করে।জীবন্ত পুড়ে মারা যান পুরো পরিবার। কয়েকদিন পর এই খবর দিল্লীত সম্রাট ছোট ভাই আওরঙ্গজেব এর কাছে গেলে দিল্লীবাসী খবই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।এতবড় সাহস যে মুঘল যুবরাজ হত্যা করা হয়।দিল্লী থেকে দলে দলে লোক চট্রগ্রাম দিয়ে আরাকানে প্রবেশ করেন। মুসলিমরা আরাকানে গিয়ে তুমুল নৈরাজ্য সৃষ্টি করেন।সুজা হত্যার প্রতিশোধ নেন। বলা হয়, আজ ওমুককে ক্ষমতায় বসিয়েছেন তো কাল অমুককে ক্ষমতায় বসিয়েছেন কিন্তু কোন মুসলিম নিজেরা ক্ষমতা নেন নি।দীর্ঘ দিন এভাবেই চলেছিল।আরাকানরা স্থানীয় ভাবে মগ নামে পরিচিত। মুঘল অনুসারীদের আরাকান বা মগ সাম্রাজ্যে এই প্রতিশোধপরায়ন কর্মকাণ্ড থেকেই প্রবাদ আসে " মগের মুল্লুক"।
বার্মা রাজার আরাকান দখল
১৭৮৪ সালে মিয়ানমার আরাকান দখল করে নেন।রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করেন।তাদের পরিচালিত মসজিদ-মাদ্রাসা গুড়িয়ে দিয়ে সেখানে প্যাগোডা নির্মিত হয়।১৮২৩ সালে ব্রিটেন মিয়ানমার দখল করে।১৯৩৭ সালে মিয়ানমারকে স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়। ১৯৩৮-৪২ পর্যন্ত বেশ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়।প্রতিটিতেই রোহিঙ্গারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।বাঁচার আসায় চলে আসেন বাংলাদেশে।
১৯৪২ সালের রোহিঙ্গা হত্যা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান ব্রিটিশদের কাছ থেকে মিয়ানমার দখল করে নিলে রাখাইনরা জাপানীদের পক্ষাবলম্বন করে রোহিঙ্গাদের উপর হামলা করে ১৯৪২ সালের মার্চ মাসে ৫ হাজার রোহিঙ্গা হত্যা করা হয়।প্রতিশোধ হিসেবে রোহিঙ্গারা উত্তর রাখাইনে ২০ হাজার মগ হত্যা করে। কিন্তু জাপানীদের সহায়তায় মগরা রোহিঙ্গাদের কোনঠাসা করতে সম্মত হয়।
ইস্ট পাকিস্তান ও আরাকানরাজ্য সংযোগ প্রচেষ্টা
১৯৪৭ সালে পাক-ভারত স্বাধীন হলে আরাকানের নেতারা জিন্নাহর সাথে যোগাযোগ করে আরাকানকে ইস্ট পাকিস্তানের সাথে সংযুক্ত করতে চায়।এইই উদ্যোগকে রাখাইনিরা বিশ্বাসঘাতকতার সাথে তুলনা করেন।১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধীন হয়। মিয়ানমার সরকারের সাথে একসময় রোহিঙ্গাদের সমঝোতা হয়।সমঝোতায় পার্লামেন্ট পদ,চাকুরি, ভাষার স্বীকৃতির নিশ্চয়তা দেন।কিন্তু পরে তা আর আলোর মুখ দেখেনি।স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৫৮ সালের দিকে বৌদ্ধরা ক্ষমতা সংহত করতে রোহিঙ্গা নির্মুল অভিযান পরিচালনা করেন।১৯৬২ সালে মিয়ানমারে সামরিক শাসন জারি হয়।সামরিক শাসক ক্ষমতায় এসে মুসলিমদের উপর দমনপীড়ন শুরু করে।১৯৭৮ সালে কুখ্যাত জেনারেল নে উইন নাগমিন ড্রাগন নামে এককটি অভিযানের মাধ্যমে হাজার হাজার রোহিঙ্গা হত্যা করেন।প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয়য় নেয়।পরবর্তীকালে UNHCR ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনের এর চাপে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন
এই আইনের মাধ্যমে মিয়ানমারে তিনধরনের নাগরিকত্বের বিধান করা হয়।১.পূর্ণাঙ্গ ২. সহযোগী ৩.অভিবাসী। ১৮২৩ সালের আগে মিয়ানমারে বসবাসকারী ১৩৫ টি গোত্রভুক্ত নাগরিকগনই ফুল নাগরিকত্ব পাবেন।আইনে রোহিঙ্গাদের সহযোগী নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হয়।রোহিঙ্গারা আরাকানের অভ্যন্তরীণ অন্য অঞ্চলে যেতে চাইলে মিয়ানমার BGP (Border Guard Police)এর কাছ থেকে Travel pass নিতে হয় শুধু তাই নয় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসতে না পারলে নিজ গ্রামে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়।১৯৮২ সালের আইনানুযায়ী ১৯৮৯ সালে মিয়ানমারে তিনধরনের নাগরিকত্ব কাড (Card) দেয়া হয় :- গোলাপী,নীল,সবুজ কিন্তু রোহিংগাদের কোন কাডই দেয়া হয় নাই।১৯৯০ সালের পর থেকে রোহিঙ্গা দেরকে বিয়ের জন্য সরকারের অনুমোতি নিতে হয়।এমনকি ২০০৫ সালের পর থেকে BGP পক্ষ থেকে দম্পত্তিদের জানিয়ে দেয়া হয় দুইয়ের অধিক সন্তান নেওয়া যাবে না।১৯৯১ সালে Oepration Pezza নামে অভিযানের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করে সেখানে বোদ্ধদের পুনর্বাসন করা হয়।
সাম্প্রতিক অভিযোগ
সুচির অভিযোগ রোহিঙ্গারা বাঙ্গালী।তারা এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা নয়।এবং তারা পুলিশের উপর হামলা করেছে।
রোহিঙ্গাদের সাম্প্রতিক অভিযোগ :- BBC থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে Arakan Rohingha International এর চেয়ারম্যান জনাব নুরুল ইসলাম দাবী করেছেন সাম্প্রতিক সংঘর্ষতে তাদের ২৬৯ জন্য নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে যে তারা ৬৯ জনকে হত্যা করেছে।নাইপিদো প্রশাসনের পেছনের লোকেরা পরিকল্পিত ভাবে বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যা করে সেই দায় রোহিঙ্গাদের উপর চাপিয়ে দেন।
মিয়ানমারের ভয়:
রোহিঙ্গাদের ভেতর জন্মহার বেশি, যে হারে রোহিঙ্গা বাড়ছে তাতে মিয়ানমার প্রশাসন শংকায় ছিল। তারা রোহিঙ্গাদের এই সম্প্রসারণকে আন্তজাতিক সম্প্রদায়ের অবস্থান নেয়ার সুযোগ হিসেবে দেখছেন।২০০৯ সালের জাতিসংঘ হিসেব অনুয়ায়ী আরাকানে মুসলিম সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ ২৩ হাজার। বাংলাদেশে অবস্থান করছেন প্রায় ১১ লাখ।মোট ২০ লাখ প্রায়। বিশ্বের ৩০-৩৫ স্বাধীন দেশের চেয়ে আরাকানের রোহিঙ্গা সংখ্যায় বেশি।বর্তমানে পার্বত্য এলাকা ও চট্রগ্রামে ১১ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান বা বসবাস করছেন।
রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে কেন আসে
বাংলাদেশে আসার কারন হল রোহিঙ্গাদের নাম- চেহারা-রেলিজিয়ান সবই বাংলাদেশের সাথে মিলে। তাছাড়া বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যাপারে মৌন সম্মতি দিয়েছেন।মিয়ানমারের মুদ্রার চেয়ে বাংলাদেশের মুদ্রার মান বেশি। দেখা গেছে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি মাছের ট্রলারে কাজ করে ১ দিনে যা আয় করে সেই টাকা মিয়ানমারের প্রায় ২০০০ টাকার সমান।।সহজেই অনুমেয়। ফলে বাংলাদেশ তাদের সেকেন্ড হোম হয়ে দাড়িয়েছে।সরকার যদি রোহিঙ্গাদের স্বাধীনতা বা চলমান আন্দোলনে সমর্থন দেন তাহলে মিয়ানমার পার্বত্যচট্টগ্রাম আন্দোলনে সমর্থন দিতে পারেন।এমনকি পার্বত্যচট্টগ্রাম অঞ্চলের যেসব বিচ্ছিন্নতাবাদী আছেন তাদের কে নাইপিদো সশস্ত্র সমর্থন করতে পারেন।
বাংলাদেশ -মিয়ানমার সম্পর্ক
মিয়ানমার বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানকারী ৭ম দেশ।১৯৭২ সালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ মিয়ানমার সফর করে দুই দেশের মধ্যে একটি আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। নিন্মে বাংলাদেশ মিয়ানমার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গুলোর লিডিং পয়েন্ট তুলে ধরা হলো
1.
২০০২ সালে দুই দেশের মধ্যে Account
Trade, Coastal shhipping, Jonit Trade Commission গঠনের ব্যাপারে চুক্তি সাক্ষরিত হয়।
2.
মিয়ানমার বাংলাদেশকে ASEAN
(Association of South East Asian Nation) এর সদস্য পদ দিতে একজন সমর্থক।
3.
BIMSTEC ও BCIM এ আঞ্চলিক সহযোগিতায় একই সাথে কাজ করছে।
4.
Asian Highway and Trans Asian Railway দ্বারা দেশদুটি কানেক্টেড হওয়ার চেষ্টা করছে।
5.
২০০৩ সালে সরাসরি যোগাযোগ বৃদ্ধির চুক্তি করে।
এছাড়াও রয়েছে জ্বালানী, বানিজ্য,বিনিয়োগ,স্থল-সীমান্ত, নৌট্রানজিট, ব্যাংকিং বানিজ্য। বিনিয়োগ বাড়াতে গঠন করা হয়েছে দুটি working committee. যদি উপরোল্লিখিত চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে দুই দেশের বানিজ্যের পরিমাণ দাঁড়াবে ১ বিলিয়ন ডলার।উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মিয়ানমারে সবচেয়ে বেশি মেডিসিন রপ্তানি করে।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলে বাংলাদেশের সমস্যাসমূহ
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলে বাংলাদেশের সমস্যাসমূহ
1. কক্সবাজার অপরাধপরাধ প্রবণ এলাকা হবে।
2. রোহিঙ্গা -উপজাতি সংঘর্ষ
3. জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যাবে
4. মাদক-চোরাচালান বেড়ে যাবে।
5. অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা চলে আসবেন।
6. মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার দখল হবে।
7. আইনশৃঙ্গলা খারাপ হবে।
8. শ্রম বাজারে অপরাধের দায় বাংলাদেশকে নিতে হবে।
9. মিয়ানমার -বাংলাদেশ সম্পর্ক খারাপ হবে।
10. রাজস্ব হ্রাস পাবে।
11. পরিবেশগত ক্ষতি।
জাতিসংঘ ও মিয়ানমার
জাতিসংঘ যেহেতু সব সময় ইঙ্গ- মার্কিনী স্বার্থ দেখে, রাখাইনেও তাই হয়েছে।ফলে জাতিসংঘ মিয়ানমারের সাম্প্রতিক নির্যাতন কে ন্যাক্কারজনক বলে বিবৃতির মাঝেই সীমাবদ্ধ। আমরা দেখেছি জাতি সংঘ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের নিপীড়িত জনগণের পাশে থেকে শান্তিরক্ষী মিশন পাঠিয়েছে। ফিলিস্তিন,ইস্টতিমুর,কঙ্গো, কসোভো সহ বিশ্বের ৬৫ টিরও অধিক দেশে শান্তিরক্ষী মিশন পাঠিয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গা অধ্যুষিত আরাকানে নয় কেন? অন্যদিকে মিয়ানমারের সেনা সমর্থিত সরকার ছিল চীন-রাশিয়া পন্থী আর বর্তমান সরকার নোবেল পন্থী মানে পশ্চিমাপন্থী=সরাসরি বললে যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রপন্থী। ইঙ্গ-মারকিন জোট চাচ্ছেন না সুচী ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সেনাশাসকদের সাথে মিশে চীনের দিকে ঝুকে পড়ুক।সুতরাং মিয়ানমারকে জোটের হাতে রাখতে রোহিঙ্গা ইস্যু গায়ে লাগানোর কোন পরিকল্পনা নেই।। পরিস্কার ভাবে বললে পশ্চিমা মিত্ররা (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র) চায় প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও দক্ষিণ চিন সাগরীয় দেশগুলোকে কাছে টেনে চিনের প্রভাবকে খাটো করা। সেই যন্ত্রে মিয়ানমার এতদিন আমেরিকার নাগালের বাহিরে ছিল, সরকার পরিবর্তন বিশেষত সূচি আসায় যুক্ররাষ্ট্রের জন্য সুবিধে।।২০১৪ সালে ASEAN পরস্পরের মধ্যে ২৫২ বিলিয়ন মার্কিনী ডলার লেনদেন হয়েছে তাছাড়া মিয়ানমারের ভৌগোলিক গুরুত্ব এবং খনিজসম্পদও অন্যতম কারন এই দেশটিকে কাছে টানার জন্য।ফলে মিত্র শক্তিগুলো রোহিঙ্গা প্রশ্নে তততা সক্রিয় নয় যতটা মিয়ানমারকে কাছে টানার ক্ষেত্রে সক্রিয়।
আনান কমিশন
সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গাদের গনহত্যার তদন্তের জন্য ২৪ আগস্ট ২০১৬ সালে জাতিংঘের সাবেক মহাসচিব কফিআনানের নেতৃত্বে ‘কফি আনান কমিশন’ গঠন করা হয়।৯ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিশনের ৬ জন ছিল মিয়ানমারের নাগরিক।এক বছর পর ২৮ আগস্ট ২০১৭ সালে আনান কমিশন তাঁদের তদন্তের রিপোর্ট প্রদান করে। রিপোর্টে ৮৮ টি সুপারিশ করা হয় এর প্রথম সুপারিশ হলো রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে।রিপোর্টে রোহিঙ্গাদের বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রহীন সম্প্রদায় বলে উল্লেক করা হয়।আনান কমিশন রোহিঙ্গা দের গণহত্যার প্রমাণ পায়।এবং মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের প্রতি গণহত্যা চালাচ্ছে বলে ঘোষণা করে।১৮ আগস্ট ২০১৮ আনান কমিশনের প্রধান ও জাতিসেংঘের ৭ম মহাসচিব ঘানার কুটনীতিবিদ কফি আনান সুইজারল্যাণ্ডে ইন্তেকাল করেন।তিনি ২০০১ সালে জাতিসংঘের সাথে যৌথ ভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।
এই সমস্যার সমাধান কী?
এই সমস্যা মিয়ানমারের অভ্যন্তরিন সমস্যা হলেও ইন্টারন্যাশনাল মানবাধিকার সংস্থা চুপ থাকতে পারে না।এজন্য
1.
জাতিসংঘ মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারে।
2.
কুটনৈতিক ততপরতা জোরদার করতে পারে
3.
বহুপাক্ষিক আলোচনা করতে পারে
4.
অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করতে পারে।
শেষকথা
রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশ শীর্ষক উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আলোচনার শেষ প্রান্তে এসে আমারা একথা বলতে পারি যে,মায়ানমারের সূচনালঘ্ন থেকেই রোহিঙ্গারা সেখানে বঞ্চিত।স্বাভাবিক কারনে আরা আশ্রয়লাভের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নেয়।বর্তমানে প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয়রত আছে।দিনদিন এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।আর তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের সেদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য কুটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে।
রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশ শীর্ষক উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আলোচনার শেষ প্রান্তে এসে আমারা একথা বলতে পারি যে,মায়ানমারের সূচনালঘ্ন থেকেই রোহিঙ্গারা সেখানে বঞ্চিত।স্বাভাবিক কারনে আরা আশ্রয়লাভের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নেয়।বর্তমানে প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয়রত আছে।দিনদিন এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।আর তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের সেদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য কুটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে।
মন্তব্যসমূহ